মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এক লঞ্চ ডুবিতে প্রায় ৩০০ জন লোক নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যেই ১১২টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার না হওয়া আরো লাশ থাকতে পারে। সব মিলিয়ে এটা একটা ভয়াবহ নৌ দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে একজন যাত্রীর বক্তব্য হলো রাত ২.৩০ টার দিকে একটি কার্গোর সাথে ধাক্কা লেগে লঞ্চটি ডুবে যায়। এই দুর্ঘটনায় ১১২ কিংবা তারও বেশি লোকের মৃত্যুই শুধু বিষয় নয়। এই মৃত লোকদের অনেক পরিবার হয়তো এমনও আছে যারা জীবিত থেকেও মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করবে। অনেক সংসার ভেঙ্গে যাবে। অনেক সংসার বিরানও হয়ে যেতে পারে। লাশের সন্ধানে আসা এবং লাশগুলোকে ঘিরে যে বুকফাটা কান্না তা কোনো মূল্য দিয়ে মুছে দেয়া যাবে না। আমরা এসব শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং দোয়া করি আল্লাহ তাদের সহায়ক হোন।
লঞ্চ দুর্ঘটনার খবর যেদিন বেরিয়েছে সেদিনই জানা গেছে তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার খবর। যেন লঞ্চ দুর্ঘটনার সাথে পাল্লা দিয়ে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়া নীতিগতভাবে একটা ভালো খবর। কিন্তু আমাদের দেশে এখন কোনো বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার সংবাদে মানুষ আতঙ্কবোধ করে থাকে। সাধারণভাবে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার অর্থ হলো ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়া এবং আলোচনা-সমালোচনার পথ বন্ধ করা। কারণ তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষীয় মহল থেকে একটা কথা বারবার বলা হয়ে থাকে যে, তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সত্য বের হয়ে আসবে এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা গৃহীত হবে। কিন্তু বহু বছর বহু ঘটনার বাস্তবতা হলো তদন্তের সত্যটা প্রকাশও হয় না এবং কোনো প্রতিকারও মানুষ দেখে না। সড়ক, নৌ কিংবা অন্য কোনো দুর্ঘটনার পরে দুর্ঘটনার নানা কারণ নিয়ে আলোচনা হয়। ডিজাইনের দোষ, ড্রাইভিংয়ের দোষ ইত্যাদি নানা রকম কারণ সামনে নিয়ে আসা হয়। এই লঞ্চ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও এ ধরনের কিছু কারণ ইতোমধ্যে সামনে আনা হয়েছে। আনা পর্যন্তই। শেষ সত্যটা হয়তো কোনোদিনই জানা যাবে না। এটা সরকার এবং প্রশাসনেরই দুর্বলতা। এই দুর্বলতার খেসারত দিচ্ছে দেশের মানুষ।
মানুষের সভ্যতা, সমৃদ্ধি, শিক্ষা সবই সামনের দিকে এগুচ্ছে। তাহলে আমাদের যে ব্যর্থতা তার ইতি ঘটবে না কেন। সকলের প্রত্যাশা প্রতিকারের আন্তরিকতা নিয়েই তদন্ত কমিটি গঠিত হোক এবং তদন্তকে সফল করার জন্য উপযুক্ত লোকের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হোক। এই লঞ্চ দুর্ঘটনার প্রতিকারকল্পে যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে তা যাতে কার্যকর হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। আমরা আশা করি এই সাথে অতীতের লঞ্চ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তদন্ত কমিটিগুলোর রিপোর্টগুলোকে যেন সামনে আনা হয় এবং যেসব কারণে বা যাদের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের বিরুদ্ধে যদি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি অবশ্যই কমানো যাবে। সামনে ঝড় ও বর্ষার মওসুম আসছে। এ সময় প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে স্টিমার, লঞ্চকে চলাচল করতে হয়। লঞ্চ-স্টিমারের ত্রুটি-বিচ্যুতি, পরিচালনা ব্যবস্থার গাফলতি, নৌ-রুটের অব্যবস্থা ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঝুঁকির সাথে যুক্ত হয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে। সুতরাং এখন থেকেই সব ব্যাপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার যাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস ঘটানো যায়। দুর্ঘটনায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সরকারের দায়িত্ব রয়েছে এ বিষয়টা যেন সরকার না ভুলেন।
দু:খজনক....
উত্তরমুছুন